শত কোটি টাকায় নির্মিত কুষ্টিয়া-হরিপুর শেখ রাসেল সেতুর এ্যাপ্রোসে ধ্বস । 254 0
ছবি,কুষ্টিয়া-হরিপুর শেখ রাসেল সেতুর একাংশ
নিজেস্ব প্রতিবেদক
শতকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কুষ্টিয়া-হরিপুর শেখ রাসেল সেতুর উত্তরাংশের (হরিপুরাংশের) মূল সেতুর প্রারম্ভিক এ্যাবার্টমেন্টে নির্মিত এ্যাপ্রোস সড়ক যে কোন মুহুর্তে ধ্বসে গিয়ে মূল সেতু থেকে সংযোগ রাস্তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। দুইদিন পূর্বে প্রবল বৃষ্টির পানির স্রোতে এপ্রোচ সংলগ্ন রাস্তাটি ধ্বসে যাওয়ায় রাস্তাটি সম্পূর্নরূপে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বালি দস্যুদের বালুবাহী ট্রলি স্থানীয়দের আপত্তিকে তুচ্ছ করে এপ্রোচ সড়কের ঢালুতে উঠিয়ে দিয়ে চলাচল করার কারণে এমন ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ। সংবাদ জানার পর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলীর মতে, চরম ঝুকির মধ্যে পড়েছে এপ্রোচ সড়কটি। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে অপুরনীয় ক্ষতির আশংকা রয়েছে। কারণ সমতল ভুমি থেকে ১৫ বা ২০ফুট উচ্চতার এই এপ্রোস সড়ক ধ্বসে পড়লে স্থানীয় জনসবতি চাপা পড়ার ঘটনার সাথে প্রানহানীর আশংকাও রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ১নং হাটশ হরিপুর ইউনিয়নবাসীর দুই দশকের দাবিতে মাত্র তিন বছর পূর্বে শতকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মান শেষে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ হরিপুরবাসীর স্বপ্নের কুষ্টিয়া-হরিপুর শেখ রাসেল সেতু জনগনের চলাচলের জন্য অবমুক্ত করেন দেয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর থেকেই সেতুটির উপর যতরকম অত্যাচার ও ক্ষতির কারণ একমাত্র বালুবাহী ট্রলি। ইতোপূর্বে স্থানীয়রা একাধিকবার আপত্তি ও প্রতিবাদ জানালেও কিছুই তোয়াক্কা করেনি বালুখোর চক্র। বে-পরোয়া এসব ট্রলি চালিয়ে একাধিকবার এই সেতুর লাইট পোষ্ট, বিদ্যুৎ কেবলসহ বিভিন্ন অংশের ক্ষতি সাধন করলেও কারও সাহস নাই কিছু বলার। এমনকি এসব নিয়ে কথা বলতে গিয়ে পুলিশী হয়রানীর শিকার হতে হয় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
তবে বালু উত্তোলকারী হাটশ হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান মিলন মন্ডল এবং সাধারণ সম্পাদক হাজি আরিফুল ইসলাম বালুবাহী ট্রলির কারণে সেতুর এ্যাপ্রোচ সড়ক ধ্বসের দায় কে নেবেন এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তোর দিতে পারেন নি।
এবিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান এম সম্পা মাহমুদ বলেন, ওইখানে ব্রীজের ঢালু ধ্বসে গেছে এমন বিষয় আমার জানা নেই। তবে আপনি বলছেন আমি শহর থেকে ফেরার পথে দেখে যাবো। অবৈধ বালুবাহী ট্রলির কারণে এই ধ্বসের দায় কে নেবেন এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারলেন না তিনি।
স্থানীয় সংসদ সদস্য মনোনীত কুষ্টিয়া-হরিপুর শেখ রাসেল সেতুর নির্মানকালীন সসময় থেকে তদারককারী জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক তরিকুল ইসলাম মানিক বলেন, ব্রীজের ঢালের উপর দিয়ে ট্রলি চালাবে কেন ? ঠিক আছে আমি শুনলাম এমুহুর্তে একটু বাইরে আছি তাই আগামী রবিবার একসময় গিয়ে আমি দেখব।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আবু রাসেল বলেন, যে কোন সেতুর নিরাপদ দূরত্বের মধ্যে থেকে কোন ভাবেই মাটি বা বালু উত্তোলন সম্পূর্নরূপে নিষিদ্ধ। কেউ এই আইন লংঘন করলে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধে মামলাসহ আইনগত ব্যবস্থা গৃহীত হবে। তিনি বলেন, সেতুর নিরাপদ দুরত্ব হিসেবে তার রিভার্টমেন্ট জোন (প্রতি ১মিটার সেতুর দৈর্ঘের অনুপাতে আপ স্টীমে ধরা হয় ১দশমিক ৫মিটার এবং ডাউন ষ্টীমে হবে দশমিক ৫মিটার)কে বোঝানো হয়।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী পিযুষ কৃষ্ণ কুন্ডু বলেন, ব্রিজের রিভার্টজোন এলাকা কোন ভাবেই বালু বা মাটি কাটা যাবে না। এরা কে বা কারা এখানে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে ব্রীজকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে তা আমি সঠিক জানি না। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কুষ্টিয়া-হরিপুর শেখ রাসেল সেতু নির্মাণকারী বিভাগ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো: জাহিদুর রহমান মন্ডল বলেন, সংবাদটি জানানোর জন্য ধন্যবাদ, এমুহুর্তে আমি একটু দুরে আছি। তবে তাৎক্ষনিক আমার থানা ইঞ্জিনিয়ারকে সেখানে যেতে বলছি। সরেজমিন দেখার পর যা করনীয় তার উদ্যেগ নেয়া হবে।